কারুশিল্প জরিপ ২০২২ (পাইলট)
১.০ ভূমিকা
কারুশিল্প বাঙালী সাংস্কৃতির এক অনন্য উপাদান। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এই শিল্প। কারুপণ্যের ব্যবহার শুধুমাত্র সৌখিনতা নয়, রূচিশীল ব্যক্তিত্ব্যের পরিচায়ক। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কারুপণ্য ধীরে ধীরে সস্তা প্লাস্টিক পণ্যের দখলে চলে যাচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকর নয়, পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক পণ্যের দখলদারিত্বে দিন দিন ম্লান হচ্ছে কারুশিল্পীদের আয়। জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করছেন অনেক কারুশিল্পীই। কারুশিল্পীরা প্রতিনিয়ত যে সব প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তার সমাধানে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সেটিকে সামনে রেখে কারুশিল্প জরিপ ২০২২ এর আয়োজন। উক্ত জরিপের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। কারুশিল্পীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং তাঁদের তৈরী শিল্পকর্ম, শিল্পের কাঁচামাল, কর্মপরিবেশ, নকশা, হাতিয়ার ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ এই জরিপের মূল লক্ষ্য।
২.০ জরিপের ক্ষেত্র ও ব্যাপ্তি (Scope)
দৈহিক শ্রমে হস্ত বা পা চালিত যন্ত্র বা ঘরে তৈরী ছোট হাতিয়ার ব্যবহার করে এবং দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরী শিল্প বা উপকরণ এ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। যে সব শিল্পী শখের বশে অনিয়মিতভাবে কাজ করেন (সৌখিন শিল্পী) তাঁরা এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত হননি। দেশের ১১টি উপজেলায় উক্ত জরিপ করা হয়। উপজেলার নাম: সিরাজদিখান, শিবালয়, তানোর, মোহনপুর, জীবননগর, মুক্তাগাছা, মুন্সিগঞ্জ সদর, মোল্লাহাট, শিবগঞ্জ, সোনারগাঁ, রাউজান।
৩.০ প্রশ্নপত্র ও তথ্য সংগ্রহ
কাঙ্খিত তথ্য সংগ্রহে প্রশ্নপত্রে খোলা (Open ended), বন্ধ (Closed ended) উভয় প্রকার প্রশ্ন রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ১১জন আগ্রহী ছাত্র নির্দেশনা অনুয়ায়ী ১৮ মে ২০২২ থেকে ০৩ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। উক্ত জরিপে পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের পাশাপাশি কারুশিল্পের ছবি, কারুশিল্প তৈরীর ডিজাইন/নকশা (মোটিফ) ও ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে।
৪.০ ফলাফল
কারুশিল্পীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, জরিপে সর্বমোট ৫৩১ জন কারুশিল্পী অংশগ্রহণ করেন। উত্তরদাতাদের ৫৬.৩% পুরুষ এবং ৪৩.৭% মহিলা। সুতরাং এই গবেষণায় প্রায় সমান সংখ্যক পুরুষ এবং মহিলা অংশগ্রহণ করেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীদের বেশির ভাগ শিল্পী হিন্দু (৫৯.৪%), ইসলাম ধর্মের শিল্পী ৩৭.৫% এবং বাকিরা খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পী বিবাহিত (৯৪.৩%)। উক্ত গবেষণায় ৩৯ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য অংশগ্রহণ করেন, শতকরা বিবেচনায় যা ৮.৮%। কারুশিল্পীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট কারুশিল্পীদের ৭২.১% শিল্পীই হয় নিরক্ষর অথবা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন অথবা ৫ম শ্রেণী পাশ। মাত্র ১১ জন শিল্পী গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাকীরা কেউ অষ্টম শ্রেণী পাস (১৬.১%), কেউ এস.এস.সি. পাশ (৭.৫%), কেউ এইচ.এস.সি. পাস (২.৩%)।
অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১৮% শিল্পী মৃৎশিল্প নিয়ে, ৮.৫% শিল্পী জামদানি, ৮% শিল্পী নকশিকাঁথা এবং ৭% শিল্পী ব্যবহারিক ধাতবশিল্প নিয়ে কাজ করেন। বাকীদের অনেকেই পাটি শিল্প, খোদাইশিল্প, বস্ত্র শিল্প নিজে কাজ করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ (৮০%) শিল্পীরই মূল পেশা হল কারুশিল্প। কারুশিল্প যাদের মূল পেশা নয় তাদের অর্ধেকের বেশী (৫৯.৬%) শিল্পী গৃহিণী। বাকীরা কেউ কৃষক (১৭.৪%), কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (২.৮%)।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ শিল্পী (৭০%) উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের নিজ নিজ পেশায় যুক্ত হয়েছেন। তবে ১৩.৮% শিল্পী এ পেশায় এসেছেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে (৬৬.৪%) কারুশিল্পীরা তাদের কাজে পরিবারের সদস্যদের থেকে সহায়তা পেয়ে থাকেন। মূলত ৯৪.৩% বিবাহিত কারুশিল্পী উক্ত গবেষণায় অংশগ্রহণ করায় এই ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অর্ধেক কারুশিল্পী ব্যক্ত করেছেন যে তাদের সন্তানদের কারুশিল্পে আগ্রহ আছে।যেসব পরিবারে সন্তানরা কারুশিল্পে অনাগ্রহী তাদের ৫৩.২% পরিবারে কারুশিল্পে অনাগ্রহের কারণ হিসেবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয় উঠে এসেছে। অপরদিকে ২৮.৬% পরিবার কারুপণ্যের চাহিদার অভাব তাদের সন্তানদের এ পেশায় অনাগ্রহের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অধিকাংশ কারুশিল্পী (৭৭.৭%) তাদের কারুপণ্য তৈরীতে সহকারী/শ্রমিক নিয়োগ করেন না। যে সব কারুশিল্পী কারুপণ্য তৈরীতে সহকারী/শ্রমিক নিয়োগ করেন তাদের ৪৫.৬% শিল্পী দৈনিক ভিত্তিতে সহকারী নিয়োগ করেন। ৩৬% কারুশিল্পী পিস্্ ভিত্তিক কর্মচারী রাখেন। তবে খুব কম কারুশিল্পীই মাস ভিত্তিক (৯.৬%) ও মৌসুম ভিত্তিক (৫.৩) কর্মচারী রাখেন। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ৭৩.৫% কারুশিল্পী পূর্বে নির্মিত কারুশিল্প অনুসরণে কারুপণ্য তৈরীর ডিজাইন নির্বাচন করেন। ৯% কারুশিল্পী ক্রেতার দেয়া ডিজাইন অনুযায়ী কারুপণ্য তৈরী করেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীদের ৩২.২% শিল্পী বাঁশ/বেত ব্যবহার করেন; যেখানে ২১.২% শিল্পী সূতা, ১৭.৯% শিল্পী মাটি, ৭.৩% শিল্পী কাঠ, ৭.৩% শিল্পী লোহা ব্যবহার করেন। ৭২.৫% কারুশিল্পী উল্লেখ করেন যে তাদের কাঁচামাল সংগ্রহে সমস্যা হয় না। তবে কাঁচামাল সংগ্রহে সমস্যা হওয়া কারুশিল্পীদের সংখ্যাও কম না (১৪৪ জন, ২৭.৫%)।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রত্যেক কারুশিল্পী (৯৪.৪%) পণ্য উৎপাদনে হাতিয়ার বা মেশিন ব্যবহার করেন। মাত্র ২৯ জন কারুশিল্পী কোন রূপ হাতিয়ার বা মেশিন ছাড়াই পণ্য উৎপাদন করে থাকেন, যাদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ কারুশিল্পী (৬২.২%) তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের কাচামাল হাট-বাজার থেকে সংগ্রহ করেন। ১৭জন (৩.৪%) কারুশিল্পী পাওয়া গেছে যাঁরা খাস জমি থেকে বিনামূল্যে কাচামাল সংগ্রহ করেন। ৩৪.৩% কারুশিল্পী অন্যান্য মাধ্যম থেকে কাচামাল সংগ্রহ করলেও মাত্র ১জন কারুশিল্পী অন্য পণ্যের উপজাতকে কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন।
গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩১.৬% কারুশিল্পী তাঁদের উৎপাদিত কারুপণ্য হাট-বাজারে বিক্রি করেন। ২৩.৭% ক্ষেত্রে ক্রেতারা কারুশিল্পীদের বাড়িতে এসে পণ্য কিনে নিয়ে যান। পাইকারদের কাছে বিক্রি করার হারও কম নয় (২৫.২%)। তবে কেউ কেউ (৬.১%) ফেরি করে কারুপণ্য বিক্রি করেন। কারুশিল্পীদের দেয়া তথ্য মতে, কারুপণ্যের অধিকাংশ ক্রেতা হলেন সাধারণ ভোক্তা (৬৫.৫%)। তবে কিছু পাইকার (২১.১%), খুচরা ব্যবসায়ীও (৪.৭%) এ তালিকায় রয়েছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অর্ধেক কারুশিল্পীদের (৫০.৩%) উৎপাদিত কারুপণ্য ব্যবহৃত হয় গৃহস্থলীর কাজে। ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয় ১২.৫% কারুশিল্পীর পণ্য। ধর্মীয় কাজে (৪.২%) এবং খেলনা হিসেবে (১.৩%) কারুপণ্যের ব্যবহার আছে। তবে ৩১.৭% কারুশিল্পীর উৎপাদিত পণ্য অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। কারুশিল্পীদের তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ কারুশিল্পী (৮৬.১%) কারুপণ্য তৈরীর বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ পাননি। মূলত: অধিকাংশ কারুশিল্পী উত্তরাধিকার সূত্রে এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে পরিবারের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ পাননি। গবেষণায় ১৭ জন কারুশিল্পী (৩.৩%) পাওয়া গেছে যারা কোনো স্বীকৃতি/সম্মাননা/পুরস্কার পেয়েছেন। এটি অত্যন্ত দু:খজনক যে ৬৮.৫% কারুশিল্পীর মাসিক আয় সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। কারুশিল্পীদের সন্তানরা এই কারণে উক্ত পেশায় অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৬৩.৩% কারুশিল্পীদের মতে কারুপণ্যের উৎপাদন সময়ের সাথে কমছে। তবে অনেকেই (১১৫ জন, ২১.৭%) মনে করেন যে কারুপণ্যের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে ১৪.৯% (৭৯জন) কারুশিল্পীর মতে কারুপণ্যের উৎপাদন আগের মত একই আছে। যেসব কারুশিল্পী মনে করেন যে কারুপণ্যের উৎপাদন বাড়ছে, তাদের মতে কারুপণ্যের ইউনিট প্রতি লাভও বাড়ছে। তেমনি যারা কারুপণ্যের উৎপাদন কমছে বলে মনে করেন তাঁরা কারুপণ্যের ইউনিট প্রতি লাভ কমার ব্যাপারে সমর্থন করেছেন। একইভাবে যারা মনে করেন যে কারুপণ্যের উৎপাদন আগের মত আছে, তাদের ধারণা কারুপণ্যের ইউনিট প্রতি লাভও আগের মত একই আছে। কারুপণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে একেক কারুশিল্পী একেক মত প্রকাশ করেছেন। ৩৫.৫% কারুশিল্পীর মতে বিকল্প এবং সস্তা প্লাস্টিক পণ্যের আবির্ভাব এর জন্য দায়ী। ২১% কারুশিল্পীর মতে বাজারে কারুপণ্যের চাহিদা না থাকা এবং ১৮% কারুশিল্পীর মতে উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি কারুপণ্যের উৎপাদন কমিয়ে আনছে। তবে ব্যবহারিক উপযোগিতার অভাব (১৪.৮%), কাঁচামালের স্বল্পতা (১.৩%) এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীরা কারুপণ্য বাজারজাতকরণে প্যাকেজিং এ কোন সমস্যা বোধ করেন না। অধিকাংশের মতে (৬১.৪%) সুযোগের সীমাবদ্ধতা কারুপণ্য বাজারজাতকরণে প্রধান অন্তরায়। তবে কেউ কেউ (৭.৬%) পরিবহন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে অন্যান্য আরও কিছু সমস্যাও রয়েছে (৩১%)। কারুশিল্পীরা তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পণ্য বাজারজাতকরণের উপর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন (৪১.৮%)। ১৭.৮% কারুশিল্পী তাদের কাজের মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ পেতে ইচ্ছুক। তবে ডিজাইন (১৫.৯%) এবং অন্যান্য বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ধর্মের সাথে মূল পেশা কারুশিল্প কিনা তার একটি সম্পর্ক আছে। অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী কারুশিল্পীরা কারুশিল্পকে তাদের মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ার সাথে কারুশিল্পকে মূল পেশা হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। সুতরাং কারুশিল্পের সাথে কম শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষরাই বেশি জড়িত। কারুশিল্পীরা কিভাবে এই পেশায় যুক্ত হলেন সেটি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে হিন্দু ধর্মালম্বী কারুশিল্পীরা এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন উত্তরাধিকারসূত্রে। তবে মুসলিম কারুশিল্পীরা অধিকাংশক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য উপায়ে এই পেশায় এসেছেন। মূলত হিন্দু কারুশিল্পীরা দীর্ঘকাল যাবৎ উত্তরাধিকারের মাধ্যমে এই পেশাকে বহন করে চলেছেন। যেসব কারুশিল্পীর মূল পেশা হল কারুশিল্প তাদের পরিবারের সদস্যগণের মধ্যে কারুশিল্প কাজে সাহায্য করার প্রবণতা বেশি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির অন্তর্গত প্রায় প্রত্যেকে কারুশিল্পকে মূল পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারুশিল্পীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং না নেওয়ার সাথে মাসিক আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কারুশিল্পীদের অধিকাংশেরই মাসিক আয় সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত, যেখানে প্রশিক্ষণ না পাওয়া অধিকাংশ কারুশিল্পীর মাসিক আয় সংসারের ব্যয়ভার বহনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং কারুশিল্পীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাঁদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে।
৫.০ উপসংহার
কারুশিল্প জরিপ ২০২২ এ কারুশিল্পীদের ব্যক্তিগত, পেশাসংক্রান্ত এবং সীমাবদ্ধাতা/চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে কারুশিল্পীদের সন্তানরা এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছে যা কারুশিল্পের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সন্তানদের এই অনাগ্রহের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কারুশিল্পে আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয়টি। অধিকাংশ কারুশিল্পীরই মাসিক আয় সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। কারুশিল্পকে ধরে রাখতে তাই কারুশিল্পীদেরকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া সব থেকে বেশি জরুরী। এছাড়া কিছু কারুশিল্পী কাঁচামাল সংগ্রহে সমস্যার কথা বলেছেণ, যা গুরুত্বের সাথে দেখা প্রয়োজন। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যে সব কারুশিল্পী কারুপণ্য তৈরীর বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাদের মধ্যে আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার হার বেশী। তবে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ কারুশিল্পীই প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারুশিল্পের সাথে কম শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষদের সম্পৃক্ততা বেশী। এই বিষয়ে কারুশিল্পীদের সন্তানদেরকে উচ্চতর শিক্ষার প্রতি প্রণোদিত করা প্রয়োজন।অধিকাংশ কারুশিল্পীই কোনরূপ স্বীকৃতিবা সম্মাননা বা পুরস্কারের আওতায় আসেননি। তাদের মধ্যে আর্থিক সম্মাননা বা অন্যান্য পুরস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তাঁরাকারুশিল্পে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। সবশেষে, কারুপণ্যের ব্যবহার বাড়াতে বিকল্প ও সস্তা প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন সীমাবদ্ধ করার প্রয়াস করা উচিত। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের কুফল এবং কারুশিল্প ব্যবহারের সুফল প্রচার করার মাধ্যমে কারুশিল্পে নব উদ্যম আনায়ন সম্ভব।